বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায় এ প্রশ্ন আপনাদের অনেকের। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য মানুষের আগ্রহের কোন কমতি নেই। কারন সেখানকার উন্নত জীবনযাপন,কম খরচে ভিসা প্রাপ্তি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কারণে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ বিদেশ যাওয়ার জন্য ইউরোপের দেশগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বর্তমানে ইউরোপের অনেক দেশের ভিসা সহজে পাওয়া যায়। এ কারণে, বাংলাদেশের মানুষ ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে আগ্রহী হয়ে থাকে।
আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন দেশে যেতে চান, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোস্টটিতে আমি বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায় সেটি লিখেছি। যেমন ইতালি, জার্মান, সুইজারল্যান্ড , যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স সুইডেন সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
ইউরোপের দেশ ইতালি যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়, এ প্রশ্নের উত্তরে আমি প্রথমে ইতালি সম্পর্কে জানাবো। বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে যেতে হলে, আপনাকে বিভিন্ন প্রকার ভিসার মাধ্যমে সেখানে যেতে হবে। যেমন, স্টুডেন্ট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা,ওয়ার্ক পারমিট ভিসা,বিজনেস ভিসা,ফ্যামিলি ভিসা ও মেডিকেল ভিসা ইত্যাদি। বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার সর্বনিম্ন খরচ ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা। এবং ইতালি ভিসার সর্বোচ্চ খরচ ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা।
তবে, বাংলাদেশ থেকে আপনি যদি ইতালি যাওয়ার আগ্রহ পোষণ করে থাকেন, তাহলে সর্বপ্রথম আপনার কাছে যেটা থাকতে হবে, সেটা হল এক বছর মেয়াদী একটি গ্রহণযোগ্য ও বৈধ পাসপোর্ট।
জার্মানিতে যাওয়ার উপায়
জার্মান ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত একটি উন্নত দেশ। আপনি উন্নত এ দেশটিতে যেতে চাইলে, আপনার একটি বৈধ ও গ্রহণযোগ্য ভিসা থাকা একান্ত অপরিহার্য। বাংলাদেশ থেকে কয়েক ধরনের ভিসার মাধ্যমে আপনি দেশটিতে গমন করতে পারবেন। সাধারণত, বাংলাদেশের মানুষ স্টুডেন্ট ভিসা, ভিজিট ভিসা,এবং কাজের ভিসা এই তিন ধরনের ভিসা নিয়ে দেশটিতে গমন করে থাকে। স্টুডেন্ট ভিসায় জার্মান যেতে খরচ ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা,ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা, এবং টুরিস্ট ভিসায় খরচ হয় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা।
সুইজারল্যান্ডে যেভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডে যেতে চাইলে, আপনাকে কয়েকটা উপায়ে সেখানে যেতে হবে। যেমন, আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য এ দেশটিতে যেতে চাইলে আপনার জন্য স্টুডেন্ট ভিসার প্রয়োজন। আপনি পর্যটক হিসেবে সেখানে যেতে চাইলে টুরিস্ট ভিসা প্রয়োজন। আবার, আপনি যদি কাজের প্রয়োজনে দেশটিতে পাড়ি জমাতে চান, তাহলে আপনার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন। সাধারণত, বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ড যেতে খরচের পরিমাণ ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা, তবে এটার কম বেশি হতে পারে।
ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রসেস
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়, এ পর্যায়ে যুক্তরাজ্য সম্পর্কে জানবো। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের উন্নত দেশ যুক্তরাজ্যে যেতে চাইলে, মোট তিনটি ভিসায় আপনি সেখানে যেতে পারবেন। সেগুলো হল স্টুডেন্ট ভিসা,টুরিস্ট ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। বাংলাদেশ থেকে লন্ডন যাওয়ার খরচ ভিসা ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে। স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে গেলে খরচ হবে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা, টুরিস্ট ভিসায় খরচ হবে আনুমানিক ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা, এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।
ফ্রান্সে যেভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য, বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করে সে দেশে যেতে হয়। স্টুডেন্ট ভিসায় সে দেশে যেতে চাইলে, সে দেশের ইউনিভার্সিটির অফার লেটার থাকতে হবে। ভিসার জন্য সকল কাগজপত্র সাবমিট করার পর, ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। কাজের জন্য দুই রকমের ভিসায় সেখানে যাওয়া যায়। সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ভিসার মেয়াদ ৯০ দিনের কম, এবংদীর্ঘমেয়াদী ভিসার মেয়াদ ১ বছরের বেশি সময় হয়ে থাকে। আর টুরিস্ট ভিসা প্রদান করা হয় পরিবার, ব্যবসা বা বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য। বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্স যেতে খরচ হয় ৭ থেকে ১২ লাখ টাকা।
সুইডেন যাওয়ার উপায়
নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অতিক্রম করে, এবং ভিসা প্রসেসিং করে, আপনি বাংলাদেশ থেকে সহজে সুইডেন যেতে পারবেন। প্রথমত, আপনাকে ভিসার ধরন নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন ধরনের ভিসায় আপনি সুইডেন যেতে আগ্রহী। যেমন, পর্যটন ভিসা, ব্যবসায়িক ভিসা, শিক্ষার্থী ভিসা এবং ভিজিট ভিসা ইত্যাদি। আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করে, ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ডকুমেন্ট গুলো হলো, পাসপোর্ট, ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফরম, ছবি, ভিসা আবেদন ফি,ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি।
ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম
বাংলাদেশ থেকে বেলজিয়ামে আপনি বিভিন্ন উপায়ে যেতে পারবেন। যেমন, উচ্চ শিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায়,ভ্রমণের জন্য টুরিস্ট ভিসায় এবং কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসায়। বাংলাদেশে বেলজিয়ামের কোন এম্বাসী নেই, এজন্য অনেকে বেলজিয়াম যাওয়ার খরচ নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাকে। বেলজিয়াম ওয়ার্ক পারমিট ভিসার বর্তমান দাম ৯০০ ডলার। কিন্তু সেখানে দালালের মাধ্যমে যেতে হয় বলে খরচের পরিমাণটা বেশি হয়ে থাকে।
ডেনমার্কে যেভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়, এ পর্যায়ে আপনি বেছে নিতে পারেন ডেনমার্ককে। ইউরোপের একটি জনপ্রিয় দেশ ডেনমার্ক। আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় সেখানে যেতে পারবেন। টুরিস্ট বা ভিজিট ভিসায় ও যাওয়া যায়। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কাজ করার জন্য সেখানে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ খরচের পরিমাণ ৭০ থেকে ৯০হাজার টাকা।
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার জন্য দুটি অবলম্বন করতে হবে। একটি হলো এম্বাসীর মাধ্যমে এবং অন্যটি হলো পর্তুগালে আত্মীয় স্বজনের রেফারেন্সের মাধ্যমে। পর্তুগাল বাংলাদেশীদের জন্য ৪টি ভিসা চালু করেছে। যেমন, স্টাডি ভিসা,ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, টুরিস্ট এবং মেডিকেল ভিসা। খরচের পরিমাণ ভিসা ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে। কাজের ভিসা নিয়ে পর্তুগাল যেতে চাইলে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মতো খরচ হবে। স্টাডি করার জন্য গেলে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা খরচ হবে। টুরিস্ট ভিসায় গেলে খরচ হবে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা। মেডিকেল ভিসা খরচের পরিমাণ মোটামুটি ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার মত।
মালটায় যাওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায় জানতে এবার জানবো মাল্টায় কিভাবে যাবেন। বর্তমানে বাংলাদেশীদের জন্য মালটা যাওয়ার ভিসা উন্মুক্ত করা হয়েছে। আগে ভিসা করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো কনস্যুলেট না থাকায় বিভিন্ন এজেন্সির সহযোগিতার প্রয়োজন হতো। কিংবা ভিসা পাওয়ার জন্য ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন হতো।
অনেক বাধা প্রতিবন্ধকতার পর বাংলাদেশে মালটার দূতাবাস চালু হয়েছে। আপনি সরকারিভাবে মালটা যেতে চাইলে খরচ হবে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা। মালটা ভিসার আবেদন তিন প্রকারে করা যায়। ভিএফএফ গ্লোবালে অনলাইনের মাধ্যমে, বিভিন্ন এজেন্সির সহযোগিতায়, এবং মালটায় অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনের রেফারেন্সের মাধ্যমে।
হাঙ্গেরিতে যেভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায় জানতে এবার জানবো কিভাবে হাঙ্গেরি যাবেন। হাঙ্গেরি মধ্য ইউরোপের স্থল বিশিষ্ট একটি দেশ। বর্তমানে কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে বহু লোকজন সে দেশে অবস্থান করছেন। এর বড় কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার বিষয়টাকে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে এখানে নানা ধরনের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হচ্ছে, যার কারনে লাখো মানুষ সেখানে আগ্রহী হয়ে থাকে। আপনি কাজের উদ্দেশ্য নিয়ে গেলে খরচের পরিমাণ হবে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা, স্টাডি ভিসায় গেলে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা, এবং টুরিস্ট ভিসায় গেলে খরচের পরিমাণ ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা।
বাংলাদেশ থেকে নেদারল্যান্ড যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে নেদারল্যান্ড যাওয়ার জন্য আপনি একটি স্বল্পকালীন বা শেনজেন ভিসার আবেদন করতে পারেন। আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যদি নেদারল্যান্ডে অবস্থান করে, তাহলে আপনি কম খরচে সেখানে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সেক্ষেত্রে, আপনার খরচের পরিমাণটা দাঁড়াবে ৯ থেকে ১২ লাখ টাকা। কিন্তু এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে সেখানে গেলে খরচের পরিমাণটা বেশী হবে। সেক্ষেত্রে খরচের পরিমাণটা হবে ১৪ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
শেষ কথা
উপরের পোস্টটিতে আমি বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়, সেটা সম্পর্কে সুন্দরভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। ইউরোপের দেশ ইতালি,জার্মানী, সুইজারল্যান্ড,ফ্রান্স,যুক্তরাজ্য হাঙ্গেরি সহ ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কথা তুলে ধরেছি। আপনি পোস্টটি পড়লে জানতে পারবেন সেখানে যাওয়ার উপায়, এবং খরচ সহ যাবতীয় তথ্যাবলী।
আরো জানুন;