ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা ২০২৫
ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এ পোস্টটি আপনাকে সে বিষয়টা সম্পর্কে জানতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে। সেনজেন ইউরোপের ২৬টি দেশের একটি জোট। এই দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ভিসা ও পাসপোর্ট ছাড়া অবাধে চলাচলের অনুমতি দেয়।
সেনজেন দেশ বলতে কি বুঝায়?
ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কে জানার পূর্বে সেনজেন দেশ বলতে কি বোঝায় সেটা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। সেনজেন নামটি এসেছে লুক্সেমবার্গের একটি ছোট শহরের নাম থেকে। ১৯৮৫ সালে জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং লুক্সেমবার্গ এই পাঁচটি দেশ একটি চুক্তি করে।
এই চুক্তির মাধ্যমে তারা নিজেদের সীমান্তগুলো তুলে দেয়, যেন মানুষ অবাধে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারে। এই চুক্তিটি সেনজেন চুক্তি নামে পরিচিত, আর সেই থেকে এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় সেনজেন এলাকা।
ইউরোপের সেনজেন দেশের তালিকা
ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কে এবার আমরা জেনে নিব। বর্তমানে ইউরোপের ২৬টি দেশ সেনজেন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। নিচে দেশগুলোর তালিকা দেওয়া হলোঃ
- অস্ট্রিয়া
- বেলজিয়াম
- চেক প্রজাতন্ত্র
- ডেনমার্ক
- এস্তোনিয়া
- ফিনল্যান্ড
- ফ্রান্স
- জার্মানি
- গ্রিস
- হাঙ্গেরি
- আইসল্যান্ড
- ইতালি
- লাটভিয়া
- লিথুয়ানিয়া
- লুক্সেমবার্গ
- মাল্টা
- নেদারল্যান্ডস
- নরওয়
- পোল্যান্ড
- পর্তুগাল
- স্লোভাকিয়া
- স্লোভেনিয়া
- স্পেন
- সুইডেন
- সুইজারল্যান্ড
- লিচেনস্টেইন
এই দেশগুলোর মধ্যে আপনি যদি প্ল্যান করে ঘুরতে যেতে পারেন, তাহলে আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অসাধারণ হবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
সেনজেন দেশের সুবিধা কি?
ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি সেনজেন দেশের সুবিধা সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরী। সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের অনেক সুবিধা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- একটি সেনজেন ভিসা দিয়ে আপনি ২৬টি দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। বারবার ভিসার জন্য আবেদন করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- বর্ডার কন্ট্রোল না থাকায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে সময় কম লাগে। আপনি সহজেই বিভিন্ন শহর এবং সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারবেন।
- একাধিক ভিসার ফি দেওয়ার চেয়ে একটি ভিসা নেওয়াই সাশ্রয়ী। সেই সাথে, ভ্রমণের খরচও অনেক কমে আসে।
- আপনি যেকোনো সময় যেকোনো দেশে যেতে পারবেন। কোনো রকম বাধার সম্মুখীন হতে হবে না।
- ভাবুন তো, সকালে প্যারিসের কোনো ক্যাফেতে কফি খাচ্ছেন, আর বিকেলে ইতালির কোনো ঐতিহাসিক শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! সেনজেন ভিসা থাকলে এটা কোনো স্বপ্ন নয়, একদম বাস্তব!
সেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায়
ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কে জানতে গিয়ে অনেকে সেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে প্রশ্ন করে থাকেন। সেনজেন ভিসা পাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। কয়েকটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করলেই আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলোঃ
- ভিসার জন্য আবেদন করার আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন দেশে প্রথমে যেতে চান। সেই দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
- আপনার পাসপোর্ট, ছবি, ভ্রমণের টিকিট, হোটেলের রিজার্ভেশন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
- আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার ভ্রমণের খরচ বহন করার মতো যথেষ্ট টাকা আছে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং অন্যান্য আর্থিক দলিল দেখাতে হতে পারে।
- কিছু ক্ষেত্রে, আপনাকে ভিসার জন্য সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে। সেখানে আপনাকে আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
- একবার ভিসা পেয়ে গেলে, আপনি অনায়াসে সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ঘুরে আসতে পারবেন।
সেনজেনভুক্ত সর্বশেষ দেশ
ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে এবার জানাবো সেনজেনভুক্ত সর্বশেষ দেশ সম্পর্কে । ক্রোয়েশিয়া ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি সেনজেনভুক্ত অঞ্চলে যুক্ত হয়েছে। এর ফলে দেশটি সেনজেন অঞ্চলের ২৬তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ক্রোয়েশিয়াতে এখন ভিসা ছাড়াই যাওয়া যায়, যা পর্যটকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
ইউরোপ ভ্রমণে সেনজেন ভিসার গুরুত্ব
ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কে জানা যেমন জরুরী তেমনি জরুরী সেনজেন ভিসার গুরুত্ব সম্পর্কে জানা। যারা স্বল্প সময়ে অনেকগুলো দেশ ঘুরতে চান, তাদের জন্য এটা খুবই দরকারি। সেনজেন ভিসা থাকলে আপনি খুব সহজেই বিভিন্ন দেশে যেতে পারবেন এবং প্রতিটি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য উপভোগ করতে পারবেন।
বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রক্রিয়া
সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটির ভিসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিচে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হলো হলো:
জার্মানি
জার্মানির ভিসা প্রক্রিয়া বেশ সহজ। অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দূতাবাসে জমা দিতে হয়।
ফ্রান্স
ফ্রান্সের ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে ফ্রেঞ্চ ভাষায় দক্ষতা দেখানোর প্রয়োজন নেই, তবে কিছু মৌলিক তথ্য জেনে গেলে সুবিধা হবে।
ইতালি
ইতালির ভিসা পেতে হলে আপনাকে ইতালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহ দেখাতে হবে। তাদের কিছু ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
স্পেন
স্পেনের ভিসা পাওয়ার জন্য আর্থিক স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। আপনার ব্যাংক ব্যালেন্স এবং অন্যান্য আর্থিক দলিল ভালোভাবে যাচাই করা হয়।
FAQ(সাধারণ জিজ্ঞাসা)
প্রশ্ন:সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে কতদিন থাকা যায়?
উত্তর:সেনজেন ভিসার মাধ্যমে আপনি ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিন পর্যন্ত সেনজেন এলাকায় থাকতে পারবেন। এর বেশি থাকতে হলে আপনাকে অন্য ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন:সেনজেন ভিসা কত দিনের জন্য পাওয়া যায়?
উত্তর:সেনজেন ভিসা সাধারণত ৯০ দিনের জন্য দেওয়া হয়। তবে, ভিসার মেয়াদ আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদী ভিসার জন্য আবেদন করেন, তাহলে আপনাকে সেই অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
প্রশ্ন:সেনজেন ভিসা দিয়ে কয়টি দেশে যাওয়া যায়?
উত্তর:সেনজেন ভিসা দিয়ে আপনি মোট ২৬টি দেশে যেতে পারবেন। এই দেশগুলো হলো – জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, গ্রিস, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং লিশটেনস্টাইন।
আরো জানুনঃ
অস্ট্রেলিয়া ভিসা ফর বাংলাদেশী


