হাঙ্গেরি যেতে কত টাকা লাগে ২০২৫? আপডেট জানুন।
হাঙ্গেরি যেতে কত টাকা লাগে? এই প্রশ্নটি অনেকের। এটি ইউরোপের বুকে ছবির মতো সুন্দর একটা দেশ।এখানকার ঐতিহাসিক স্থাপত্য, সংস্কৃতি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। আপনিও কি ঘুরতে যেতে চান? ভাবছেন,হাঙ্গেরি যেতে কত টাকা লাগে? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই।
হাঙ্গেরি যেতে কত টাকা লাগে?
হাঙ্গেরি যেতে কত টাকা লাগে? সেটা সম্পর্কে সকলের ধারণা থাকা আবশ্যক। দেশটিতে যাওয়ার খরচ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। নিচে সে বিষয়টা সম্পর্কে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হলোঃ
ভিসা ফি
হাঙ্গেরি ইউরোপের সেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। তাই, বাংলাদেশ থেকে হাঙ্গেরি যেতে হলে আপনাকে সেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসার খরচ সাধারণত একই থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি পরিবর্তিত হতে পারে।
সেনজেন ভিসা ফি কত?
বর্তমানে, সেনজেন ভিসার জন্য আবেদন ফি প্রায় ৮০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ১১,২৪৪ টাকার কাছাকাছি। তবে, ভিসা আবেদন করার সময়কার ইউরোর বিনিময় হারের উপর ভিত্তি করে এই খরচ কমবেশি হতে পারে।
ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ভিসার জন্য আবেদন করার আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো গুছিয়ে নেওয়া খুবই জরুরি। সাধারণত যে কাগজপত্রগুলো লাগে, সেগুলো হলোঃ
- ৬ মাস মেয়াদী একটি বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য পাসপোর্ট।
- ভিসা আবেদন ফর্ম।
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- আগের ভিসাগুলোর কপি (যদি থাকে)।
- আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্পন্সরশিপ লেটার।
- ভ্রমণ পরিকল্পনা (প্লেনের টিকেট, হোটেলের রিজার্ভেশন)।
- ভ্রমণ বীমা (ট্রাভেল ইন্সুরেন্স)।
- প্লেনের টিকেট
হাঙ্গেরি যাওয়ার ক্ষেত্রে প্লেনের টিকেটের দাম একটা বড় বিষয়। টিকেটের দাম সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত, সিজন এবং এয়ারলাইন্সের ওপর নির্ভর করে টিকেটের দাম কমবেশি হয়ে থাকে।
প্লেনের টিকেটের আনুমানিক খরচ
ঢাকা থেকে হাঙ্গেরির সরাসরি ফ্লাইট নেই। সাধারণত, আপনাকে কানেকটিং ফ্লাইট নিতে হবে। এক্ষেত্রে, টিকেটের দাম সাধারণত ৬০,০০০ টাকা থেকে ১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নিচে মাস অনুযায়ী প্লেনের টিকিটের আনুমানিক মূল্য তুলে ধরা হলোঃ
- জানুয়ারি মাসে টিকেটের আনুমানিক মূল্য ৬০,০০০-৭০,০০০ টাকা।
- এপ্রিল মাসে টিকেটের আনুমানিক মূল্য ৭০,০০০-৮০,০০০ টাকা।
- জুলাই মাসে টিকেটের আনুমানিক মূল্য ৯০,০০০-১,২০,০০০ টাকা।
- অক্টোবর মাসে টিকেটের আনুমানিক মূল্য ৭৫,০০০-৮৫,০০০ টাকা।
হাঙ্গেরিতে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের অপশন রয়েছে। আপনার বাজেট এবং চাহিদার ওপর নির্ভর করে আপনি হোটেল, হোস্টেল, অ্যাপার্টমেন্ট বা গেস্ট হাউস বেছে নিতে পারেন। নিচে বিভিন্ন হোটেলে রাতে থাকার জন্য খরচের পরিমাণ তুলে ধরা হলোঃ
- গেস্ট হাউস বা এয়ারবিএনবিতে প্রতি রাতের জন্য খরচ ৩,০০০-৫ ,০০০ টাকা।
- মাঝারি মানের হোটেলে প্রতি রাতের জন্য খরচ হয় ৫,০০০-৮,০০০ টাকা।
- লাক্সারি হোটেল প্রতি রাতের জন্য খরচ ১০,০০০ টাকা বা তার বেশি।
খাওয়ার খরচ
হাঙ্গেরিতে খাবারের খরচ বেশ রিজনেবল। আপনি যদি লোকাল রেস্টুরেন্টে খান, তাহলে কম খরচে ভালো খাবার পাওয়া যায়।
- সাধারণ রেস্টুরেন্টে প্রতি বেলার খাবার খরচ ৫০০-১০০০ টাকা।
- মাঝারি মানের রেস্টুরেন্টে প্রতি বেলার খাবার খরচ ১০০০-২০০০ টাকা।
- ফাস্ট ফুডগুলোতে প্রতি বেলার খাবার খরচ ৩০০-৫০০ টাকা।
যদি আপনি নিজে রান্না করে খান, তাহলে খরচ আরও কমাতে পারবেন। সুপারমার্কেট থেকে খাবার কিনে রান্না করলে প্রতিদিনের খাবার খরচ অনেক কম হবে।
পরিবহন
হাঙ্গেরিতে চলাচলের জন্য বাস, ট্রাম, মেট্রো এবং ট্যাক্সি পাওয়া যায়। এদের মধ্যে মেট্রো এবং ট্রাম বেশ জনপ্রিয় এবং সাশ্রয়ী।
- একদিনের জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট টিকেট খরচ প্রায় ৫০০-৮০০ টাকা।
- ট্যাক্সিতে প্রতি কিলোমিটার খরচ প্রায় ১০০-১৫০ টাকা।
ঘোরাঘুরি ও দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
হাঙ্গেরিতে দেখার মতো অনেক সুন্দর জায়গা আছে। বুদাপেস্টের সংসদ ভবন, হিরোস স্কয়ার, বুদা ক্যাসেল – এই স্থানগুলো খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া, হাঙ্গেরির বিভিন্ন ঐতিহাসিক শহর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো।
- বিভিন্ন জাদুঘর এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলোর প্রবেশ মূল্য সাধারণত ১৫০০-৩০০০ টাকা হয়ে থাকে।
- কিছু স্থান বিনামূল্যে পরিদর্শন করা যায়।
হাঙ্গেরি বেতন কত?
হাঙ্গেরি যেতে কত টাকা লাগে? সে বিষয়টা সম্পর্কে জানার সাথে সাথে এবার দেশটির বেতন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
হাঙ্গেরির সর্বনিম্ন বেতন
হাঙ্গেরির সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতন হলো গ্রস ২০০,০০০ HUF (হাঙ্গেরিয়ান ফোরিন্ট), যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭২,০০০ টাকার সমান। তবে, বিভিন্ন পেশা এবং অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে বেতন ভিন্ন হতে পারে।
বিভিন্ন পেশায় বেতনের ধারণা
- সাধারণ শ্রমিকের বেতন গ্রস ২০০,০০০ – ২৫০,০০০ HUF বা বাংলাদেশি ৭২,৫০০- ৯০,৬০০ টাকা প্রায়।
- আইটি সেক্টরের বেতন গ্রস ৪০০,০০০ – ৮০০,০০০ HUF বা তার বেশি।বা বাংলাদেশি ১,৪৫,০০০-২,৯০,০০০ টাকা প্রায়।
- শিক্ষকের বেতন গ্রস ৩০০,০০০ – ৫00,০০০ HUF বা বাংলাদেশি ১,০৮,৮০০-১,৮১,০০০ টাকা প্রায়।
- স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর বেতন গ্রস ৩৫০,০০০ – ৬০০,০০০ HUF বা বাংলাদেশি ১,২৭,০০০-২,১৭,০০০ টাকা প্রায়।
- উল্লেখ্য, এই বেতনগুলো আনুমানিক এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে।
হাঙ্গেরি যেতে কি কি লাগে?
হাঙ্গেরি যেতে কত টাকা লাগে? সে বিষয়টা সম্পর্কে জানতে গিয়ে অনেকে দেশটিতে যেতে কি কি লাগে সেটা সম্পর্কে জানতে চান। নিচে সেখানে যেতে কি কি লাগে সেটা সম্পর্কে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হলোঃ
- বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা।
- প্লেনের টিকেট।
- হোটেল বুকিং বা থাকার ব্যবস্থা।
- ভ্রমণ বীমা
- প্রয়োজনীয় পোশাক এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র
- ইউরো (EUR) মুদ্রা
- ভিসা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজের ফটোকপি
- একটি পাওয়ার অ্যাডাপ্টার (হাঙ্গেরির প্লাগ টাইপ C এবং F)
হাঙ্গেরি সর্বনিম্ন বেতন কত?
হাঙ্গেরি যেতে কত টাকা লাগে? সেটা জানার সাথে সাথে দেশটির সর্বনিম্ন বেতন কত সেটা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকতে হবে। নিচে দেশটির সর্বনিম্ন বেতন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হলো।
ন্যূনতম বেতন
২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, হাঙ্গেরির সর্বনিম্ন বেতন গ্রস ২০০,০০০ HUF (প্রায় ৭২,০০০ টাকা)। এই বেতন সাধারণত এন্ট্রি লেভেল পদের জন্য প্রযোজ্য।
জীবনযাত্রার খরচ
হাঙ্গেরিতে জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলকভাবে কম। তবে, বুদাপেস্টের মতো বড় শহরগুলোতে খরচ একটু বেশি। আপনার বেতন এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে পারলে ভালো হয়।
হাঙ্গেরি ভিসা অফিস ঢাকা
হাঙ্গেরি যেতে কত টাকা লাগে? সেটা সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পর এবার দেশটির ভিসা অফিস সম্পর্কে জেনে নিব। ঢাকার হাঙ্গেরি ভিসা অফিস থেকে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারেন।
FAQ (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন)
প্রশ্ন:হাঙ্গেরি যেতে ভিসার জন্য কতদিন আগে আবেদন করতে হয়?
উত্তর:সাধারণত, ভ্রমণের কমপক্ষে ১-২ মাস আগে ভিসার জন্য আবেদন করা উচিত। এতে ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।
প্রশ্ন:হাঙ্গেরিতে থাকার জন্য সেরা জায়গা কোনটি?
উত্তর:বুদাপেস্ট, ডেব্রসেন এবং সেজেড হাঙ্গেরির অন্যতম সেরা শহর। বুদাপেস্ট তার ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও নাইটলাইফের জন্য বিখ্যাত, ডেব্রসেন তার সংস্কৃতি এবং সেজেড তার উৎসবের জন্য পরিচিত। আপনার আগ্রহের ওপর নির্ভর করে আপনি যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
প্রশ্ন:হাঙ্গেরিতে ভ্রমণের জন্য সেরা সময় কখন?
উত্তর:বসন্ত (এপ্রিল-মে) এবং শরৎকাল (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) হাঙ্গেরি ভ্রমণের জন্য সেরা সময়। এই সময় আবহাওয়া সাধারণত খুব মনোরম থাকে এবং পর্যটকদের ভিড়ও তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
প্রশ্ন:হাঙ্গেরিতে কি ইংরেজি ভাষায় কথা বলা যায়?
উত্তর:হাঙ্গেরিতে কিছু লোক ইংরেজি বলতে পারলেও, বিশেষ করে পর্যটন এলাকাগুলোতে, স্থানীয় ভাষা জানা থাকলে সুবিধা হয়। কিছু বেসিক হাঙ্গেরিয়ান শব্দ শিখে গেলে যোগাযোগ সহজ হবে।
আরো জানুনঃ
নিউজিল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে
সুইজারল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে?


