আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা ২০২৫

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতাঃ আমেরিকা বিশ্বের উন্নত এবং শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। এখানে রয়েছে  উন্নতমানের শিক্ষা ব্যবস্থা,কর্মসংস্থান ও গবেষণার জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা। সুতরাং, আমেরিকা অনেকের কাছে চাকচিক্যময় জীবন যাপনের জন্য আকাঙ্ক্ষিত এক গন্তব্যের নাম।

কিন্তু বাংলাদেশ থেকে চাইলেই কি একজন সাধারণ নাগরিক সেখানে যেতে পারেন? না,সেটা পারেন না কারণ তাকে আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেই সেখানে যেতে হয়। আমেরিকাতে বিভিন্ন রকম ভিসা  রয়েছে যেমন,স্টুডেন্ট ভিসা,টুরিস্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, ইত্যাদি।

আপনার আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা নির্ভর করবে এসব ভিসা ক্যাটাগরির উপর। এ পোস্টটিতে আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমেরিকার ভিসা ক্যাটাগরি,আমেরিকার স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা,টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা,আমেরিকা ভিসা খরচ ইত্যাদি। আশা করি পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনারা সবাই উপকৃত হবেন।

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতায় যে যোগ্যতাগুলো প্রয়োজন সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে। অর্থাৎ, আপনাকে ইংরেজি ভাষায় কথা বলার মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
  •  ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। আপনি কোন ধরনের ভিসা পেতে চাচ্ছেন সেটার উপর নির্ভুল অনলাইন ফরম পূরণ অপরিহার্য।
  • একটি ৬ মাস মেয়াদী বৈধ ও  গ্রহণযোগ্য পাসপোর্ট থাকতে হবে।
  • পাসপোর্ট এর ফাঁকা পৃষ্ঠা অবশ্যই থাকতে হবে।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  •  মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহে রাখতে হবে।
  •  একটি বৈধ ব্যাংক স্টেটমেন্ট থাকা অবশ্যক।
  •  আপনার বর্তমান কর্মস্থলের অফিস প্রধানের চিঠি সংগ্রহ করতে হবে।

আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা গুলো সম্পর্কে জানার পর এবার আমরা জানবো সে দেশের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো।

  • একটি বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য পাসপোর্ট।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদপত্র।
  • আমেরিকার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার পেতে হবে।
  • IELTS স্কোর সার্টিফিকেট থাকতে হবে
  • থাকা খাওয়া,টিউশন ও অন্যান্য খরচ বহন করার প্রমাণস্বরূপ ব্যাংক স্টেটমেন্ট থাকতে হবে।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
  • Medical report certificate
  • ঠিকানা প্রমাণের সঠিকতা নিরূপনের জন্য গ্যাস/ পানি/ বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি।
  • জাতীয় পরিচয় পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি থাকতে হবে।

আমেরিকায় টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জানার সাথে সাথে টুরিস্ট ভিসার যোগ্যতা সম্পর্কেও একটা পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। নিচে টুরিস্ট ভিসার যোগ্যতাগুলো সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।

ব্যাংক স্টেটমেন্ট

আপনি টুরিস্ট ভিসায় আমেরিকা যেতে চাইলে আর্থিক সক্ষমতা ব্যাংক স্টেটমেন্ট থাকতে হবে। আর্থিক সক্ষমতাকে ভ্রমণ ভিসার প্রাণ বলে আখ্যায়িত করা হয়। আপনাকে ন্যূনতম ৬মাস পূর্বের সম্পত্তির ডকুমেন্ট দেখাতে হবে। অনেকে ভিসা করার পূর্বে ৮-১০ লাখ টাকা ধার করে ব্যাংকে রেখে এম্বাসিকে দেখানোর চেষ্টা করে। এটা আপনার ভিসা বাতিলের অন্যতম কারণ হতে পারে। আপনার ইনকামের বৈধতা প্রমাণ করা একান্ত অবশ্যক।

পেশাগত যোগ্যতা থাকতে হবে

আপনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন সেটা হতে পারে ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকরি। আপনার আয়ের অবস্থানটি অবশ্যই ভালো হতে হবে। ব্যবসায়ী হলে ব্যবসাটা দীর্ঘদিনের হতে হবে। এবং এটা লাইসেন্স যোগ্য হতে হবে। তাছাড়া আপনার নিয়োজিত পেশা সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ আপনার অঙ্গভঙ্গি এবং মুখভঙ্গি দেখেই তারা বুঝতে সক্ষম আপনি কোন পেশায় নিয়োজিত।

আপনি ভ্রমন প্রিয় মানুষ এটার যথার্থ প্রমাণ দেওয়া

আমেরিকায় টুরিস্ট ভিসায় যাওয়ার জন্য আপনি সত্যিকার অর্থে একজন ভ্রমন প্রিয় মানুষ এটার প্রমাণ দেওয়া একান্ত আবশ্যক। বাংলাদেশীদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। ভ্রমণকারী হিসেবে  বেড়াতে গিয়ে অবৈধ অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করে। সেখানে গিয়ে তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে এবং সেটা দেশের সম্মানহানির কারণ হয়ে থাকে।

আমেরিকায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা জেনেছি। এবার আমেরিকার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার জন্য যে যোগ্যতা গুলো প্রয়োজন সেগুলো নিচে বর্ণিত হল।

  • একটি বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য পাসপোর্ট
  • আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
  • ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সনদপত্র
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • মেডিকেল রিপোর্ট
  • আমেরিকার কোন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির অফার লেটার পেতে হবে
  •  স্কিল সার্টিফিকেট বা দক্ষতার সনদপত্র থাকতে হবে
  • কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ পত্র

আমেরিকা ভিসা খরচ

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জেনেছি এবার জানবো আমেরিকার ভিসা খরচ সম্পর্কে ।

স্টুডেন্ট ভিসা

স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা যেতে চাইলে আপনাকে ১৪ হাজার টাকা খরচ গুনতে হবে।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বা কাজের জন্য আমেরিকায় যেতে খরচ হবে ১৭ হাজার টাকা।

টুরিস্ট ভিসা

টুরিস্ট ভিসা বা ভ্রমণের জন্য আমেরিকার যেতে আগ্রহী হলে ১৪ হাজার টাকা খরচ করে অনলাইনে এপ্লাই করতে হবে।

বাংলাদেশে আমেরিকার অ্যাম্বাসি কোথায় অবস্থিত?

বাংলাদেশ থেকে যারা আমেরিকা যেতে ইচ্ছুক তাদের অবশ্যই  আমেরিকার এম্বাসি কোথায় সেটা জানা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশে আমেরিকার এম্বেসি অবস্থিত,মাদানী এভিনিউ বারিধারা,ঢাকা-১২১২,তে।

প্রয়োজনে টেলিফোন নাম্বারঃ(৮৮০)( ২) ৫৫৬৬-২০০০

আমেরিকা ভিসা পেতে কত দিন লাগে?

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের সাথে সাথে অনেকের মনে এ প্রশ্নটি ঘুরপাক খেতে থাকে যে,আমেরিকা ভিসা পেতে কতদিন লাগে? সাধারণত,আপনার আবেদন গ্রহণের তারিখ থেকে ভিসা প্রক্রিয়াকরণে ২১ কার্যদিবস সময় লাগে।

আমেরিকা স্টুডেন্ট ভিসায় কি কাজ করা যায়

আমেরিকায় পড়াশোনার পাশাপাশি সীমিত পরিসরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ভার্সিটিগুলোতে ক্লাস চলাকালীন সপ্তাহে আপনি সর্বোচ্চ ২০ ঘন্টা কাজ করতে পারবেন। এবং সেটা বন্ধের সময় সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪০ ঘন্টা কাজ করতে পারবেন।

আমেরিকা স্টুডেন্ট ভিসা ব্যাংক স্টেটমেন্ট

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা জানার পর এবার জানবো ব্যাংক স্টেটমেন্ট সম্পর্কে। আমেরিকার ভিসা প্রক্রিয়াকে মসৃণ করার জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্টের গুরুত্ব অপরিসীম। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে ব্যাংকে কত টাকা দেখাতে পারলে আমেরিকায় যাওয়ার পথটা সহজ হবে। সাধারণভাবে বলা যায় আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে পূর্ণ এক বছরের টিউশন ফি ও আপনার জীবনযাত্রার খরচ বহন করার জন্য যথেষ্ট অর্থ থাকতে হবে। তবে, আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট একটু বেশি দেখানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

যেমন,ধরা যাক আপনার বছরে মোট খরচ ৪৫ হাজার ডলার,কিন্তু আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানোর লক্ষ্য থাকতে হবে ৫০,০০০ ডলার। এটাই নিরাপদ ব্যাংক স্টেটমেন্ট হিসেবে পরিগণিত হবে।

আমেরিকার ভিসা ইন্টারভিউ

আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতায় ইন্টারভিউ সম্পর্কে জানবো। এবার দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর আপনারা যারা আমেরিকার ভিসা ইন্টারভিউ এর তারিখ পেয়েছেন তারা নিজেদেরকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের তারিখ পাওয়ার পর আপনি আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন যে,আপনার প্রস্তুতি কিভাবে নেওয়া উচিত? ইন্টারভিউয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে? কিভাবে ইন্টারভিউয়ে ভালো ফলাফল করে দ্রুত সফল হওয়া যায়? ইত্যাদি।

সাধারণত, আমেরিকার ভিসা প্রাপ্তি অনেকাংশে নির্ভর করে ইন্টারভিউয়ে ভালো ফলাফল করার উপর। আপনি যদি ঠিকঠাক সকল প্রশ্নের উত্তর করতে পারেন এবং কনসুলার যদি খুশি হয়ে যায় তাহলে আপনি নিশ্চিত ভিসা পাবেন। তারা সাধারণত যে প্রশ্নগুলো করে থাকে সেগুলো হল,আপনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ইচ্ছা আছে কিনা, আপনি আগে কখনো আমেরিকায় গিয়েছেন কিনা,USA ভ্রমণ করবেন কেনো ইত্যাদি।

শেষ কথা

উপরিউক্ত পোস্টটিতে আমি আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেমন, স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা, টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা,ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা, ভিসা খরচ,ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি।আশা করি, পোস্টটি পড়লে আপনারা সবাই উপকৃত হবেন।এরকম সুন্দর সুন্দর পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

FAQ

প্রশ্নঃ বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে বিমানে কত ঘন্টা সময় লাগে?

উত্তরঃ বিমানে করে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে ২৫ থেকে ৩৫ ঘণ্টা সময় লেগে থাকে। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বিমানে করে আমেরিকা যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

প্রশ্নঃবাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে?

উত্তরঃ বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য ১৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা যাওয়ার আগ্রহ পোষণ করে থাকেন তাহলে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ করে সেখানে যাওয়া সম্ভব।

প্রশ্নঃআমেরিকার কি কি কাজের চাহিদা বেশি?

উত্তরঃ ব্যবস্থাপনা,নার্সিং,প্রকৌশল,তথ্য প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার,মানবসম্পদ,বিপণন ও বিক্রয় ইত্যাদি কাজের চাহিদা বেশি।

আরো জানুনঃ

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা বিস্তারিত

Leave a Comment