মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা ২০২৫

মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে সেখানে পড়তে যাওয়ার কথা ভাবছেন? বর্তমানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দিক দিয়ে মালয়েশিয়া অনেক এগিয়ে। প্রতি বছর প্রায় ১৪০ টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন উন্নত এ দেশটিতে। এখানে রয়েছে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, যা একজন শিক্ষার্থীর  সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে ২ লাখেরও বেশি।

এখানে রয়েছে আধুনিক প্রগতিশীল ও বহু সংস্কৃতির এক অনন্য সমাহার, যা দেশটিকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীই জানে না স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে উন্নত এ দেশটিতে কিভাবে পড়াশোনার সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। এ পোস্টটিতে মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়লে আপনারা সবাই উপকৃত হবেন।

মালয়েশিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন

মালয়েশিয়ায় বছরে সাধারণত তিনটি সেমিস্টার পড়ানো হয়ে থাকে। প্রথম সেমিস্টার টি শুরু হয় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। দ্বিতীয়টি মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত। আর তৃতীয়টি সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। অন্যান্য দেশের মতো এই দেশে আপনাকে দিতে হয় না কোন ভর্তি পরীক্ষা। কোন স্কাইপি বা অনলাইনে আপনাকে ইন্টারভিউ দিতে হয় না।

আপনাকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট আবেদন করতে হবে। আপনি সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন করতে চাইলে আপনাকে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হবে। আর এটা করতে অনেক সময়ের ও প্রয়োজন হবে। আপনি যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন করে থাকেন তাহলে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ও কম সময়ের মধ্যে এডমিশন লেটার পেয়ে যাবেন।

আপনার সকল কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার জন্য ইস্যু করা অফার লেটারটি পাঠিয়ে দেয় ইএমজিএসএ। আপনার অ্যাপ্রুভাল লেটার টি  সেখান থেকেই ইস্যু করা হয়ে থাকে।  emgs পূর্ণরূপ education malaysia global service মালেশিয়ার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি ইমিগ্রেশনের সাথে কাজ করার কোন সুযোগ নেই।

এজন্য সকল শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র তারা পাঠিয়ে দেয় emgs এ। emgs এর কাজ হল ডকুমেন্টস ভেরিফাই ও তার সত্যতা যাচাই করে ইমিগ্রেশনে পাঠিয়ে দেওয়া। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অ্যাপ্রুভাল লেটার তৈরি করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা অ্যাপ্রুভাল লেটারটি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়।

মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং

প্রথমত, একজন শিক্ষার্থী যখন  মালয়েশিয়াতে  পড়াশোনা করার জন্য আসতে চায় তখন সর্বপ্রথম তার কাজ হবে একটা ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করা। অথবা মাল্টিপল ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করা। যেমন ধরা যাক আপনি পড়াশোনা করার জন্য মালয়েশিয়াতে যেতে চান এবং সেখানে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে মাস্টার্স করতে চান।

তখন আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো কিছু নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইমেইল করা, অথবা সে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ঐ সমস্ত ইউনিভার্সিটির যে কোর্সগুলো আছ, সে কোর্সগুলোর প্রোগ্রাম সম্পর্কে জেনে নেওয়া। এরপরে যে কাজটা আপনাকে করতে হবে সেটা হল ডকুমেন্টেশন।

আপনি যদি ব্যাচেলার বা ডিপ্লোমাতে আসতে চান সেক্ষেত্রে আপনার এসএসসি, এইচএসসি, এসএসসি ডিপ্লোমা, এসএসসি ফাউন্ডেশন এই ধরনের ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে। এভাবে আপনাকে  সব ধরনের ডকুমেন্টগুলো যাচাই করে ইউনিভার্সিটি তে পাঠাতে হবে। সবগুলো ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাইয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনাকে অফার লেটার পাঠাবে।

এরপর আপনাকে ইএমজিএস ফি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে। পরবর্তীতে ই এম জি এস আপনার ডকুমেন্টগুলোর সত্যতা যাচাই করে ইমিগ্রেশনে পাঠিয়ে দিবে। এরপর ইমিগ্রেশন আপনার জন্য অফার লেটার তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আপনার কাছে পৌঁছে দেবে।

মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট  ভিসা ইন্টারভিউ

স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় যেতে আগ্রহী অনেক শিক্ষার্থীই জানে না ইন্টারভিউয়ের জন্য কোন কোন কাগজপত্র গুলো নিয়ে যেতে হয়। এবং কি ধরনের প্রশ্ন তারা করতে পারে। যে ধরনের কাগজপত্র গুলো নিয়ে যেতে হবে সেগুলো হল, আপনার মূল পাসপোর্ট, emgs এর অ্যাপ্রুভাল কপি, এডুকেশনাল ডকুমেন্টস,অফার লেটার, আপনি যে টিউশন ফিস পরিশোধ করছেন অথবা emgs পরিশোধ করছেন তার কপি।

অনেক শিক্ষার্থীই ইন্টারভিউ এর সময় কোন কোন ধরনের প্রশ্ন করতে পারে এটা ভেবে চিন্তিত হয়ে থাকেন। আসলে প্রশ্ন সম্পর্কে  পূর্ব থেকে বলার কোন সুযোগ নেই। তবে আপনি যে ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছেন সেই ইউনিভার্সিটি সম্পর্কিত সকল তথ্য আপনাকে জানতে হবে। আপনি যে প্রোগ্রাম বা কোর্সে যাচ্ছেন সেই কোর্স বা প্রোগ্রাম সম্পর্কেও আপনাকে ভালোভাবে জানতে হবে। এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে তারা প্রশ্ন করতে পারে।

মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা ফর বাংলাদেশী

বাংলাদেশি কোন শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যদি সে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে চান। তাহলে তাকে অবশ্যই  কিছু বিষয় বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। যদি কোন শিক্ষার্থী পড়াশোনার উদ্দেশ্যে সেখানে যেতে চান তাহলে তাকে সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে।

আবার কোন শিক্ষার্থী যদি কাজের উদ্দেশ্যে সেখানে যেতে চান তাহলে তাকে সে অনুযায়ী অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী কিভাবে মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেস করবে সে সম্পর্কে নিচে তুলে ধরা হলো।

১। প্রথমে বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থীকে মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা  সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট গুলো থেকেও  শিক্ষার্থীরা এটা সম্পর্কে থেকে ভালো ধারণা নিতে পারে।

২।আবেদন করার পূর্বে একজন শিক্ষার্থীকে তার সকল সনদপত্র গুলো যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক।

৩। এরপর একজন শিক্ষার্থীকে ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম, ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম, ব্যাচেলার প্রোগ্রাম, এবং মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাতে হবে যেমন, পাসপোর্ট এর স্ক্যান কপি, ছবি, এসএসসির সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্টের স্ক্যান কপি ইত্যাদি।

স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের ডকুমেন্ট সমূহ

মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের জন্য যে ডকুমেন্টস গুলো প্রয়োজন সেগুলো নিচে বর্ণিত হল ।

  •  ভিসা আবেদনের জন্য পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফরম।
  • একটি বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য পাসপোর্ট।
  • শিক্ষাজীবনের সকল সনদ ও মার্কশিট, ielts যদি প্রয়োজন হয়।
  • এপ্রুভাল লেটার।
  • ব্যাংক  সলভেন্সির  কাগজপত্র।
  • ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে।
  • শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে no objection certificate প্রয়োজন।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি ।
  • রেফারেন্স লেটার প্রয়োজন।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।

মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা খরচ কত?

মালেশিয়া স্টুডেন্ট ভিসার বিভিন্ন খরচের বর্ণনাগুলো নিচে দেওয়া হল।

  • মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং ফি ২০০-৫০০ মালয়েশিয়ান  রিংগিত
  • ভিসা এপ্লিকেশন করার জন্য প্রয়োজন ৫০-১০০মালয়েশিয়ান  রিংগিত
  • আপনাকে ইন্সুরেন্স ফি প্রদান করতে হবে  ৫০০-৮০০মালয়েশিয়ান রিংগিত
  • স্টুডেন্ট পাস প্রসেসিং ফি এর জন্য  আপনাকে দিতে হবে ৬০-১২০ মালয়েশিয়ান রিংগিত
  • মেডিকেল পরীক্ষার খরচ বাবদ আপনাকে দিতে হবে ২০০-৩০০মালয়েশিয়ান রিংগিত

মালয়েশিয়ার স্টুডেন্ট ভিসা করতে কতদিন লাগে?

মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন থেকে শুরু করে ভিসা পাওয়ার আগ পর্যন্ত সমস্ত প্রক্রিয়াটিতে সাধারণত চার থেকে থেকে ছয় সপ্তাহের মতো সময় লাগে। সাধারণত ভিসা আবেদনপত্র প্রক্রিয়াকরণ হতে সময় লাগে ১৪ দিন। এবং আপনার প্রবেশ  ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ১ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসার বয়স সীমা কত?

মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা  প্রাপ্তির জন্য অনেক শিক্ষার্থীই তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন কিন্তু তারা মালয়েশিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার বয়সসীমা সম্পর্কে অবগত নন। আপনার বয়স হতে হবে সাধারণত ১৮ থেকে ৩৫ বছর যদি আপনি ভাষা ইনস্টিটিউটে এপ্লাই করে থাকেন। আর আপনি যদি অন্যান্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এপ্লাই করে থাকেন তাহলে আপনার বয়সের কোন সীমা পরিসীমা নেই।

স্টুডেন্ট ভিসায় কি মালয়েশিয়া পার্ট টাইম কাজ করা যায়?

হ্যাঁ, স্টুডেন্ট ভিসায় একজন শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় গিয়ে নানা ধরনের কাজ করতে পারে। মালয়েশিয়াতে স্টুডেন্ট ভিসা যে সংস্থাটি প্রোভাইড করে সে সংস্থাটির নাম হল emgs অর্থাৎ,education malaysia global service তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে আপনি স্পষ্ট দেখতে পাবেন একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করার সুযোগ রয়েছে।

এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক পার্ট টাইমে একজন শিক্ষার্থী কি কি ধরনের কাজ করতে পারে। এখানকার অনেকগুলো কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কাজ হলো হোটেল বা রেস্টুরেন্টে কাজ করা। শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে কোন ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই হোটেল বা রেস্টুরেন্টে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এখান থেকে একজন শিক্ষার্থী প্রতি ঘন্টায় ৭ থেকে ১০ রিঙ্গিত সহজে ইনকাম করতে পারবে। এটা ছাড়াও একজন শিক্ষার্থী চাইলে কফি শপ,বুক শপ,বা কোন শপিংমলে সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে  কাজ করতে পারে।

মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ কতদিন?

মালয়েশিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ সাধারণত ১ বছরের জন্য বৈধ। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার দেড় মাস  আগে আপনাকে এটি পুনর্নবীকরণের প্রতি নজর দিতে হবে।

শেষ কথা মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত এ পোস্টটিতে স্টুডেন্ট ভিসার যাবতীয় তথ্যাবলী অত্যন্ত সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন, আবেদনের খরচ, মালয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা ইন্টারভিউ,স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের ডকুমেন্ট সমূহ ইত্যাদি। ভিসা সংক্রান্ত এরকম সুন্দর সুন্দর তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

আরো জানুনঃ

ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা বিস্তারিত

Leave a Comment