ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পড়াশোনা করে উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবছেন? তাহলে এ পোস্টটি সেটা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জানতে দারুনভাবে সহযোগিতা করবে। দেশটিকে বলা হয় হাজার হ্রদের দেশ। দেশটি ইউরোপের উত্তরে অবস্থিত এবং সবুজ অরণ্যে ঘেরা। ফিনল্যান্ডের রাজধানীর নাম হেলসিংকি যেটা দেশটির সর্ববৃহৎ শহর হিসেবেও পরিচিত।
এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত মানের হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে দেশটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানে না কিভাবে দেশটিতে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। এ পোস্টটিতে আমি ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং
ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে দেশটিতে পড়াশোনা করতে যাওয়ার পূর্বে দেশটির স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং সম্পর্কে জানা একান্ত প্রয়োজন। এখন আমি ধাপে ধাপে সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রথম ধাপ, আপনাকে প্রথমে সঠিক প্রোগ্রাম এবং ইউনিভার্সিটি নির্বাচন করতে হবে। এই ধাপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয় ধাপ,Preparing Documents Checklist অর্থাৎ আপনার নির্বাচন করা University এবং Programme অনুসারে আপনার কি কি Documents লাগবে সেগুলো গুছিয়ে ফেলতে হবে। যেমন,আপনি যদি মাস্টার্স প্রোগ্রামে এপ্লাই করেন তাহলে আপনার ব্যাচেলর সার্টিফিকেট, অরিজিনাল ট্রান্সক্রিপ্ট ইত্যাদি প্রয়োজন হবে।
তৃতীয় ধাপ,এবার আপনি অ্যাপ্লিকেশনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। আপনাকে শুরুতেই অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে কারণ,ফিনল্যান্ডে First phase এবং Second phase বলে একটা বিষয় থাকে। সুতরাং,যারা আগে এপ্লিকেশন করে তারা First phase এ Select হয় এবং যারা পরে এপ্লিকেশন করে তারা Second phase এ Select হয়। তাছাড়া,Entrance exam এবং Interview এই অনুসারে হয়ে থাকে। তাই যথা সম্ভব শুরুতেই অ্যাপ্লিকেশন করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
চতুর্থ ধাপ,আপনার এপ্লিকেশন সম্পন্ন এবার আপনাকে Entrance exam এর জন্য Preparation নিতে হবে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে সেটা হল আপনার যদি ইংরেজিতে এবং গণিতে দক্ষতা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি পরীক্ষাটিতে ভালো করবেন।
পঞ্চম ধাপ,Accepting offer আপনারা জানেন যে ফিনল্যান্ডে ৬টি ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করা যায়। আপনার যদি দুইটি বা তিনটি ইউনিভার্সিটি থেকে অফার আসে তাহলে আপনাকে একটি বেছে নিতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপ,এই ধাপটিতে আপনাকে টিউশনি ফি পরিশোধ করতে হবে।
সপ্তম ধাপ,Preparing Documents for visa এটা করার জন্য আপনি ফিনল্যান্ডের ওয়েবসাইট Migri.fi এই দুইটি ওয়েবসাইটে দেখতে পাবেন যে শিক্ষার্থীদের Visa application বা Resident permit application এর বিষয়টা।Finland সাধারণত Resident permit দিয়ে থাকে। আপনি চাইলে এর পাশাপাশি D type national ভিসার মাধ্যমেও Application করতে পারবেন। তবে যারা D type national visa বা Resident card দুটোর জন্য Apply করবেন তাদের জন্য পরামর্শ হলো।
যদি সময় থাকে তাহলে শুধু Resident card এর জন্য Apply করা। এবং সময় কম থাকলে D type national ভিসার জন্য আবেদন করুন। এই ভিসা আপনাকে দ্রুতগতিতে দেশটিতে যেতে সহায়তা করবে। এভাবেই আপনি ভিসা প্রসেসিং এর কাজ সমাপ্ত করতে পারবেন।
ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের জন্য অনেকগুলো ডকুমেন্ট প্রয়োজন। নিচে ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
- একটি বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য পাসপোর্ট অবশ্যই থাকতে হবে।
- Visa application form
- University offer letter
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি থাকতে হবে।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- Income source বা আয়ের উৎস।
- টিউশন ফি পরিশোধের প্রমাণপত্র।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সার্টিফিকেট
- IELTS SCORE(যদি প্রয়োজন হয়)
- ACADEMIC TRANSCRIPT
- NATIONAL ID CARD
ফিনল্যান্ডে কেন পড়তে যাবেন?
ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে জানার সাথে সাথে চলুন জেনে নেওয়া যাক দেশটিতে কেন পড়তে যাবেন সেটা সম্পর্কে। সাধারণত,ফিনল্যান্ড ইউনিভার্সিটি গুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বমানের এবং যুগোপযোগী। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একজন শিক্ষার্থী সাশ্রয়ী মূল্যে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া,পৃথিবীর সব দেশ কমবেশি স্টাডি গ্যাপ ম্যাটার করলেও ফিনল্যান্ডে স্টাডি গ্যাপ ম্যাটার করে না। এখানে ৪০ বছর বয়সী অনেকে ব্যাচেলর করে থাকে।
যেটা পৃথিবীর অনেক দেশেই সম্ভব নয়।
ইউনিভার্সিটি গুলোতে Admission confirm করতে পারলে এবং কাগজপত্র সঠিক থাকলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় সেটা হলো IELTS ছাড়াও MOI(MEDIUM OF INSTRUCTION) CERTIFICATE দিয়েও অ্যাপ্লিকেশন করতে পারবেন। দেশটিতে দুই ধরনের ভাষায় পড়াশোনা করানো হয়। ভাষা দুইটা হলো ফিনিশ ও সুইডিশ। এগুলো ছাড়াও এখানে রয়েছে উদার রাজনীতি,প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য,এবং মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা যা শিক্ষার্থীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত।
স্টুডেন্ট ভিসার খরচ কত?
ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসার খরচ কত এ প্রশ্নটি অনেকের। স্টুডেন্ট ভিসার খরচের সাথে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য খরচের বিষয়টি নিয়েও শিক্ষার্থীদের ভাবতে হয়। যেমন,ভিসা প্রসেসিং ফি,
এজেন্সি খরচ,বিমান টিকিট বুকিং,স্বাস্থ্য বীমা খরচ ইত্যাদি। বর্তমানে,স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে দেশটিতে যেতে খরচ হয় ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা। তবে,Scholarship নিয়ে দেশটিতে পড়তে গেলে খরচের পরিমাণ কমতে পারে।
স্টুডেন্ট ভিসা ব্যাংক স্টেটমেন্ট
স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ফিনল্যান্ড যাওয়ার পূর্বে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ব্যাংক স্টেটমেন্ট সম্পর্কে জানা একান্ত জরুরী। সাধারণত,ভিসা আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করার জন্য দেশটিতে যেতে চাইলে ৯ লাখ টাকা Bank statement দেখাতে হয়। আপনার যদি পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকে তাহলে ২ টাকা স্থায়ী জামানতের মাধ্যমে Bank statement দেখাতে পারবেন।
পড়াশোনার জন্য কত IELTS স্কোর প্রয়োজন?
ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে IELTS এর ভূমিকা অপরিসীম। দেশটিতে পড়াশোনা করার জন্য একজন শিক্ষার্থীর ন্যূনতম IELTS স্কোর ৬ থাকতে হবে।
ফিনল্যান্ডে কোন কাজের চাহিদা বেশি?
অনেকে ফিনল্যান্ডের চাহিদা সম্পন্ন কাজগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করে থাকেন এখন আমরা সে বিষয়টা সম্পর্কে জেনে নিব। দেশটির চাহিদা সম্পন্ন কাজ গুলো নিচে বর্ণিত হলো।
স্বাস্থ্য সেবা খাত।
- Engineering and technology
- শিক্ষা এবং গবেষণা।
- নির্মাণ এবং অবকাঠামো খাত।
- তথ্য প্রযুক্তি।
- বাণিজ্য ও গ্রাহক সেবা।
- পর্যটন খাত।
- পরিবহন খাত। ইত্যাদি।
স্টুডেন্ট ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগে?
ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে জানার পর এবার জানবো ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগে সে বিষয়টা সম্পর্কে। সাধারণত,ফিনল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়াকরণ বা কার্যক্রম শেষ হতে ৩ মাস সময় লাগে।
শেষ কথা
উপরিউক্ত পোস্টটিতে আমি ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছি। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনারা সবাই উপকৃত হয়েছেন। এরকম সুন্দর সুন্দর পোস্ট পেতে visabarta.com এর সাথেই থাকুন।ধন্যবাদ।
আরো জানুনঃ