লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে দেশটিতে পড়তে যাওয়ার আগ্রহ অনেক শিক্ষার্থীর। কারণ,এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানের। ইউরোপের দেশগুলো অফিসিয়াল ভাষায় ব্যাচেলর ডিগ্রি করার সুযোগ দেয়, কিন্তু লিথুয়নিয়া ইংরেজিতে ব্যাচেলার মাস্টার ও পিএইচডি করার সুযোগ দেয়। এজন্য অসংখ্য শিক্ষার্থীর স্বপ্নের দেশ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে দেশটি। পশ্চিম ইউরোপের একটি সুন্দর দেশ লিথুয়ানিয়া।এটি বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত।
দেশটির আয়তন ৬৫,৩০০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যার পরিমাণ ২.৯ মিলিয়ন। সেনজেনভুক্ত দেশ হিসেবে এটি EU তে যোগদান করে ২০০৪ সালে। লিথুয়ানিয়ার রাজধানীর নাম ভিলনিয়াস।বাংলাদেশেী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য পছন্দের শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা, কানাডা,UK,অস্ট্রেলিয়া,নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি। এগুলোর পরের স্থানে রয়েছে উত্তর ইউরোপিয়ান দেশগুলো।
এ পোস্টটিতে আমি জানাবো লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। যেমন,লিথুয়ানিয়ায় কেন পড়তে যাবেন? ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া,স্টুডেন্ট ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র,ব্যাংক স্টেটমেন্ট,পার্ট টাইমে কাজ করা যায় কিন? IELTS ছাড়া আবেদন করার সুযোগ আছে কিনা,ভিসা পেতে কতদিন লাগে ইত্যাদি।
লিথুয়ানিয়ায় কেন পড়তে যাবেন?
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের কাছে একটি জনপ্রিয় নাম লিথুয়ানিয়া। দিন দিন এটার পরিধি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। কারণ,এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানের। যেটা একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার ও উন্নত জীবন গঠনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া,এখানে রয়েছে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং,ও বিজ্ঞান বিষয়ক নানা ধরনের কোর্স করার সুযোগ সুবিধা।
যেটা আপনার ক্যারিয়ারকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এগুলো ছাড়াও দেশটির জিডিপি পার ক্যাপিটা ১,৯১৫৩.৪১ USD.যেটা দেশটাকে উন্নয়নের পথে চালিত করছে।
ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া
লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হলে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকতে হবে। সাধারণত,বাংলাদেশে লিথুয়ানিয়ার এম্বাসী না থাকার কারণে আপনাকে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ভারতের দিল্লিতে যেতে হবে।
এজন্য আপনাকে দ্রুত এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। আপনার ইংরেজি দক্ষতা কেমন সেটা যাচাইয়ের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার সময় একটি সাক্ষাৎকারের সম্মুখীন হতে হবে। অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন এই ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগতে পারে?এই ভিসা পেতে সাধারণত সময় লাগে ১৪ দিন।
আপনি এক বছর বা ছয় মাসের ভিসা পাবেন। এরপরে,লিথুয়ানিয়ায় পৌঁছানোর পর মেয়াদ শেষ হওয়ার চার মাস আগে আপনাকে TEMPORARY RESIDENCE PERMIT(TRP) এর জন্য আবেদন করতে হবে। এটা করার পর আপনাকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সত্যায়িত করার জন্য বাংলাদেশের অ্যাম্বাসিতে যেতে হবে যেটা পোল্যান্ডে অবস্থিত।
আপনি যখন TRP নিবেন তখন আপনাকে অবশ্যই BANK STATEMENT SHOW করতে হবে। এজন্য আপনার ACCOUNTএ দুই বা তিনসপ্তাহের জন্য কমপক্ষে ২৩০০ ইউরো জমা থাকতে হবে। বাংলাদেশী টাকায় যেটার পরিমাণ ২,৮৯,১৫৬ টাকা । এভাবে আপনি আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
স্টুডেন্ট ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসার জন্য যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলো নিচে দেওয়া হলো।
- একটি অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম অবশ্যই থাকতে হবে।
- একটি বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য পাসপোর্ট।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- সত্যায়িত সকল ডকুমেন্টস,মার্কশিট ও সকল সনদপত্র প্রয়োজন হবে।
- ইউনিভার্সিটি অফার লেটার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস।
- কমপক্ষে তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট থাকতে হবে।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- ব্যাংক সলভেন্সির পেপারসগুলো রেডি রাখতে হবে।
- ACCOMMODATION সনদ ও হেলথ ইন্সুরেন্স থাকতে হবে।
স্টুডেন্ট ভিসা ব্যাংক স্টেটমেন্ট
লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে জানার সাথে সাথে এবার জেনে নেব ব্যাংক স্টেটমেন্টের বিষয়টা। অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা ব্যাংক স্টেটমেন্ট কত টাকা দেখাতে হয় বা কত মেয়াদে দেখাতে হয়।
ইউরোপের দুটি দেশে স্টুডেন্ট ভিসায় ব্যাংক স্টেটমেন্টের ঝামেলা নেই বললেই চলে,দেশ দুটি হলো ডেনমার্ক এবং লিথুয়ানিয়া। সাধারণত,লিথুয়ানিয়ায় ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হয় ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার ইউরো। বাংলাদেশী টাকায় যেটার পরিমাণ ৮ লক্ষ বা এটার উপরে। এবার আসি কত মেয়াদে দেখাতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, লিথুনিয়াতে তিন মাস ছয় মাস এরকম মেয়াদের কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
আপনার এডমিশন আসার পরেও আপনি একাউন্ট খুলে এটা জমা রাখতে পারবেন। অনেকে এটাও জানতে চান টাকাটা সেভিংসে রাখবো নাকি ফিক্সড ডিপোজিটে রাখবো। তবে এক্ষেত্রে ফিক্স ডিপোজিটের চেয়ে সেভিংসে রাখাটাই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। মূলত, ক্যান্ডিডেটের একাউন্টে টাকা থাকলে স্পন্সারের প্রয়োজন হয় না। স্পন্সর যদি বাবা-মা বা ভাই বোন হয় তাহলে বিজনেস করলে ট্রেড লাইসেন্স এবং জব করলে ইমপ্লয়মেন্ট সার্টিফিকেট দিতে হবে।
স্টুডেন্ট ভিসায় কি পার্ট টাইমে কাজ করা যায়?
লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসায় কি পার্ট টাইমে কাজ করা যায়? এই প্রশ্নটি অনেক শিক্ষার্থীর। উত্তরটা হলো হ্যাঁ,আপনি পার্ট টাইমে কাজ করতে পারবেন। দেশটিতে সপ্তাহে অন্তত ২০ ঘন্টা কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তবে,সামার ভ্যাকেশন ফুল টাইম কাজ করা যায়। একটি বিষয় হলো, এদেশের ভাষা না জানা থাকলে কাজ পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। তাছাড়া,কাজ করে পড়াশোনা করাটা অনেক সময় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
IELTS ছাড়া কি লিথুনিয়াতে আবেদন করা যায়?
হ্যাঁ,লিথুয়ানিয়াতে যারা মাস্টার্স প্রোগ্রামে এপ্লাই করবেন তারা MOI অর্থাৎ MEDIUM OF INSTRUCTION এর সার্টিফিকেট দিয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন। তাছাড়া আপনি DUOLINGO EXAM এর মাধ্যমে সহজেই আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার স্কোর ১০০ থাকতে হবে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলো ৯৫ স্কোরও গ্রহণ করে।আবার কিছু কিছু ইউনিভার্সিটি আছে যারা শুধুমাত্র ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে অ্যাডমিশন দিয়ে থাকে।
লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা পেতে কতদিন লাগে?
লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা পেতে কতদিন লাগে এবার আমরা সে বিষয়টি জেনে নেব। লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা পেতে সাধারণত সময় লাগে ২ সপ্তাহ। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় ৬সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
শেষ কথা
উপরিউক্ত পোস্টটিতে আমি লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সুন্দরভাবে তুলে ধরেছি। যেমন, লিথুয়ানিয়া কেন পড়তে যাবেন? ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া,স্টুডেন্ট ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট,পার্ট টাইমে কাজ করা যায় কিনা,IELTS ছাড়া আবেদন করা যায় কিনা,ভিসা পেতে কতদিন লাগে,ইত্যাদি।
আশা করি, পোস্টটি পড়ে লিথুয়ানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় জেনে উপকৃত হবেন। এরকম সুন্দর সুন্দর পোস্ট পেতে visabarta.com এর সাথেই থাকুন।
আরো জানুনঃ